• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন

×

এমপিদের বিরুদ্ধে মাঠে মেয়র-চেয়ারম্যানরা

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ২০০ পড়েছেন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এই চিত্র বরিশালের প্রায় সব নির্বাচনি এলাকায়। মনোনয়ন পেতে বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। কেউ আবার প্রকাশ্যে কিছু না বললেও নেপথ্যে নাড়ছেন কলকাঠি। সব মিলিয়ে দলে চলছে অস্থিরতা।

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে সুস্পষ্ট একটি ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তা হলো-মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। যে কারণে সেবার এটা নিয়ে জটিলতা হয়নি। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি দল থেকে। তাই আশায় বুক বেঁধে মাঠে নেমেছেন মেয়র-চেয়ারম্যানরা। কেন্দ্রে লবিং-তদবিরের পাশাপাশি এলাকায়ও ছুটছেন তারা। তুলে ধরছেন নিজেদের সাফল্য আর বর্তমান এমপিদের ব্যর্থতা।

বরিশালের ২১ নির্বাচনি এলাকার ৪টিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোটের শরিক দলগুলোর এমপি। বিগত নির্বাচনে ওই আসনগুলো তাদের ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আগামীতে অবশ্য তা ছাড়তে নারাজ স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘নৌকার কাঁধে ভর করে এখানে জেতে লাঙ্গল। তাই এবার আমরা নেত্রীর কাছে নৌকা চাই।’

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন প্রার্থী প্রকৌশলী নেতা মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে এটি আওয়ামী লীগের আসন। নেত্রীর কাছে একটাই দাবি, আমরা নৌকা চাই।’ পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরুপকাঠি) আসনেও একই পরিস্থিতি। এখানে বর্তমানে এমপি মহাজোটের শরিক জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘এখানে জেপির অবস্থান যে কতটা দুর্বল তা আমরা সদ্য সমাপ্ত ভান্ডারিয়া পৌর নির্বাচনে বুঝিয়ে দিয়েছি। নৌকার অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়ে হেরেছে জেপি। নৌকার কাঁধে ভর দিয়ে নয়, নৌকার প্রার্থীকেই জেতাতে চাই। সভানেত্রীর কাছে সেটাই চাওয়া।’

একইভাবে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনেও নৌকার প্রার্থী চাওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র ও মনোনয়ন প্রত্যাশী রাফিউদ্দিন ফেরদৌস। সেখানে বর্তমানে এমপি জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।

উল্লিখিত ৪টিই কেবল নয়, দক্ষিণের ২১ আসনের প্রায় সব কটিতেই মনোনয়নের লড়াইয়ে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের মেয়র-চেয়ারম্যানরা। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে মনোনয়ন চাইছেন বানারীপাড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। মনোনয়নের আশায় দুই উপজেলায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মনোনয়ন চাইছেন বাবুগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, মুলাদীর উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু এবং মুলাদীর পৌর মেয়র শফিকুজ্জামান রুবেল।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মনোনয়ন চাইছেন বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাঈদুর রহমান রিন্টু। এ ছাড়া এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও আছেন আলোচনায়। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন চাইছেন বাকেরগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু ও মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া।

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন ঝালকাঠির জেলা চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির। বরগুনার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরও মনোনয়ন চান বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে। এই আসনে আমতলীর পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান এবং তালতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজভিউল হক জমাদ্দারও চান মনোনয়ন।

পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনে দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠে আছেন পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মালেক। পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়ন চাইছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। বেতাগীর পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির মনোনয়ন চাইছেন বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) আসনে।

মনোনয়ন প্রশ্নে বেশি জটিলতা চলছে পটুয়াখালীর বাউফলে। এই একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-২ নির্বাচনি এলাকায় বর্তমান এমপি সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে মনোনয়ন যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন বাউফলের পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদার। মনোনয়ন দ্বন্দ্বে সেখানে দল ত্রি-খণ্ড হওয়াই কেবল নয়, প্রায়ই ঘটছে সংঘাত-সংঘর্ষ।

শুরু থেকেই এমপি ফিরোজবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন মেয়র জুয়েল। উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব ছিলেন ফিরোজ অনুসারী। সাম্প্রতিক সময়ে এই দুজনের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব। কোন্দলের ফলে ফিরোজ অনুসারীদের হামলায় গুরুতর আহত হন মোতালেব। বর্তমানে সেখানে সব দলীয় কর্মসূচি ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পালন করেন এই ৩ নেতার অনুসারীরা।

কিছুদিন আগে বাউফল উপজেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামনে বক্তব্য দেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর। দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চান তিনি। এভাবে বক্তব্য রাখায় রোষাণলেও পড়তে হয় তাকে। বাউফলে সভা করে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন এমপি ফিরোজ অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। পালটা হিসাবে উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব সমর্থকরা আবার সমর্থন দেয় কাজী আলমগীরকে।

এসবের পাশাপাশি আরও কয়েকটি এলাকায় দলীয় মনোনয়ন চাইছেন পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এরা হলেন পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে গলাচিপার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ, দশমিনার উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আজীজ, পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকি-মীর্জাগঞ্জ) আসনে পটুয়াখালী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার এবং দুমকীর উপজেলা চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশিদ হাওলাদার।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও আবার সংসদ-সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পৌর মেয়র অ্যাসোসিয়েশন, ম্যাব’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাউফলের মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, ‘পৌর এলাকাও কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের অন্তর্ভুক্ত। সেখানকার ভোটাররা এমপি নির্বাচনে ভোট দেন।

আবার স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণ হিসাব করতে গেলে দল পরিচালনাসহ সব ক্ষেত্রে আমাদেরকে পৌর এলাকার পাশাপাশি পুরো উপজেলার জন্য কাজ করতে হয়। যেখানে কাজের পরিধি আর ভোটের রাজনীতি এত ব্যাপক সেখানে কেবল পৌরসভা নিয়ে কাজ করতে নানা জটিলতায় পড়তে হয় বলেই সংসদ-সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন চাইছি। উন্নয়ন প্রশ্নে আমার যদি সক্ষমতা থাকে পুরো নির্বাচনি এলাকার নেতৃত্ব দেওয়ার তাহলে কেন চাইব না?’

মেয়র-উপজেলা চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মুহিব্বুর রহমান বলেন, ‘যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারে। তবে কে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য আর কে নয় সেই সিদ্ধান্ত দেবেন দলীয় সভানেত্রী। আমি মনে করি মনোনয়নের লড়াই হোক উন্নয়ন আর সততার ভিত্তিতে। নিজেদের মধ্যে কোন্দল না করে উন্নয়ন আর সততার প্রশ্নে লড়াইটা লড়লে একদিকে যেমন জটিলতা বাধবে না তেমনি দেশও এগিয়ে যাবে।’

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA